My ClickBD
‘লাইবা রুটি মেকারে সেদ্ধ আটার রুটি হয় বলে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাচ্ছে!!! লাইবা রুটি মেকার এর মাধ্যমে রুটি বানানোকে ছোট বাচ্চারা এখন খেলা মনে করে। দেড় বছরের ছোট্ট বাবু লাইবাও রুটি বানাতে পারে। রুটি তৈরি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও সে জানে ছোট্ট কাঠের এ মেশিনটির হাতল ধরে চাপ দিলেই তা রুটিতে পরিণত হয়। আর এ মেশিনটির আবিষ্কারক লাইবার বাবা হুমায়ুন কবীর। তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন, তার আবিষ্কৃত এই ‘লাইবা রুটি মেকার’ দিয়ে ছেলে, বুড়ো সবাই খুব সহজেই দ্রুত ও সুন্দরভাবে রুটি তৈরি করতে পারবেন। আর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে মাত্র ২ সেকেন্ডে! বাংলাদেশে খাদ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রুটি। ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির কারণে রুটি খাদ্যতালিকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। পাকিস্তানসহ অনেক দেশে রুটিই প্রধান খাদ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বড় জনগোষ্ঠীর প্রিয় খাবার রুটি। সেই রুটি বানানোর ঝক্কি কিন্তু কম নয়। হাতে রুটি বানানো বেশ কষ্টসাধ্য। অনেক পরিবারে কেবল রুটি বানানোর জন্যই বুয়া পুষতে হয়। এসব মাথায় রেখেই হুমায়ুন কবির তৈরি করেছেন ‘লাইবা রুটি মেকার । মাগুরা জেলার বুনাগাতী গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির বিশেষ ধরনের রুটির মেশিন তৈরি করে এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করতে চলেছেন। এই মেশিনে গমের সেদ্ধ আটার রুটি, গমের কাঁচা আটার রুটি, সেদ্ধ চালের গুঁড়ার রুটি, তালের রুটি, কালিজিরা রুটি, মাসকলাইয়ের রুটি, মিষ্টিআলুর রুটি, দিল্লিকা রুটি, বেসন রুটি, ভেজিটেবল টোস্ট রুটি, মাসরুম রুটি, ইন্ডিয়ান বাটার রুটি, খামিরি রুটি, মিছি রুটি, পালক পরোটা, পনির পরোটা, মাঠার পরোটা, মেথি পরোটা, গোবি পরোটা, ইন্ডিয়ান লাচ্চা পরোটা, এগ পরোটা, কিমা পরোটা, ক্যাপসিকাম চিজ পরোটা, ক্যাবেজ পরোটা, পিস পরোটা, লুচি ও ফুসকা প্রভৃতি তৈরি করা যায় বলে হুমায়ুন কবির জানান। মেশিনের বিশেষত্ব হলো এক মিনিটের মধ্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি রুটি যে কেউই তৈরি করতে পারেন। মেশিনটির সুবিধা হিসেবে আবিষ্কারক হুমায়ুন কবির বলেন, এতে সেদ্ধ আটার রুটি খুব ভালো হয়। সেদ্ধ চালের গুঁড়োর রুটিও খুব ভালো হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের রুটির রেসিপি অনুসারে রুটি তৈরি করা যায়। রুটি কাগজের মতো পাতলা এবং রুটি বড় সাইজেরও করা যায়। মেশিনের গ্যারান্টি ১০/২০ বছর। বিদ্যুত্ খরচ নেই। ১৫-২০ দিন পরপর রুটি মেশিনে লাগানো পেপারটি পরিবর্তন করতে হয় বলে আজীবনই এটি নতুন থাকে। এটি দেশি প্রযুক্তি। যে কোনো সাইজের আটার গোল্লাটাকে সম্পূর্ণ গোল রুটি বানিয়ে দেয়। আবিষ্কারক হুমায়ুন আশা প্রকাশ করে বলেন, আমার এই রুটি তৈরির কার্যক্রমটি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এ মেকারটির আরও বিস্তার ঘটানো সম্ভব। হুমায়ুনের রুটি মেকার মেশিন বিদেশে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত, ভুটান, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, দুবাই, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই মেশিন গেছে। তার মেশিনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিদ্যুত্ ছাড়াই এটি চলে এবং প্রতি দুই সেকেন্ডে একটি করে রুটি বানানো যায়। হুমায়ুন কবির একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। তবে পেশার বাইরে নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রতি তার ঝোঁক ছিল বরাবরই। রুটি বানানো নিয়ে মহিলাদের কষ্ট ও বিড়ম্বনার বিষয়টি তার অনুসন্ধিত্সু দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। রুটি বানানোর বিদেশি মেশিন বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু বিদ্যুত্চালিত এ মেশিনগুলোর বিদ্যুত্ খরচও বেশ। এছাড়াও ওইসব মেশিনে কোন ধরনের সেদ্ধ আটার রুটি তৈরি করা যায় না। ২০১১ সালে এই মেশিন তৈরির কাজে হাত দেন হুমায়ুন। তিনি তার দেড় বছর বয়সের মেয়ে লাইবাকে দিয়ে রুটি বানানো দেখিয়ে জানান, এই মেশিনটির উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্লে-গ্রুপের অবুঝ শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত এই মেশিনে অতিসহজে রুটি বানাতে পারেন। মেশিনে যে কোনো শেপের আটাই দেয়া হোক না কেন, রুটি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো গোলাকার। যারা রুটি বানাতে গেলে এবড়ো-থেবড়ো করে ফেলেন, তাদের সম্মান বাঁচাবে এই মেশিন। হুমায়ুন কবির তার মেয়ের নামে মেশিনটির নামকরণ করেছেন ‘লাইবা রুটিমেকার’। বিদ্যুত্চালিত মেশিনের চেয়ে হুমায়ুন কবিরের মেশিনে রুটি বানানো সহজ ও সুবিধা বেশি বলে চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে তিনি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উত্পাদন শুরু করেছেন। মানুষের কেনার সুবিধার্থে মানভেদে দাম নির্ধারণ করেছেন ৩ হাজার 2০০ টাকা, ৪ হাজার টাকা ও ৬ হাজার ৫০০টাকা এবং হেভি ডিউটির মডেলের দাম আলাদা। তিনি প্যাটেম্লট রেজিস্ট্রেশন করে তার নিজের বাড়িতে একটি কারখানা স্থাপন করেছেন। সেখানে ১২ জন কারিগর নিয়মিত কাজ করছেন। হুমায়ুন কবির জানান, এখন প্রতি মাসে ৫০/৬০ টির মতো মেশিন তৈরি হলেও চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। তার ইচ্ছা, কাঠের এই মেশিনটিকে সেমি-মেটালে উন্নীত করে মাসে অন্তত পাঁচ হাজার মেশিন তৈরি করা, এতে একদিকে যেমন মানুষের চাহিদা পূরণ হবে, অন্যদিকে হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। মেশিনটি তৈরি করতে পূর্ণ মেটাল ব্যবহার করে অটোমেটিক ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা গেলে মেশিনের দাম ৭৫ ভাগ কমে আসবে। এতে সব মানুষের ক্রয়সাধ্য হবে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে কারখানাটির পরিসর বাড়াতে পারছেন না তিনি। তিনি এ ব্যাপারে ব্যাংক ঋণ সুবিধার দাবি করেন। হুমায়ুন কবির জানান, তার তৈরি মেশিনটি এরই মধ্যে নকল করার চেষ্টা হয়েছে। তার কারিগরদের ভাগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে হুমায়ুন সাহেবকে কয়েকবার হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে, এমনকি তবে বিদেশে ইতিমধ্যে কপি করার চেষ্টা হয়েছে বলে হুমায়ুন সাহেব জানালেন, কিন্তু আশার কথা হলো, তারা এখনও সফল হয়নি এবং প্রযুক্তিগত কারণে তারা সফল হবেনা। |